لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল।
তাৎপর্য
কালিমা তায়্যিবা অর্থ হলো পবিত্র বাক্য। এটি তাওহিদ, ইমান ও ইসলামের মূলভিত্তি। এ কালিমা স্বীকার না করলে কেউ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ কালিমার দুটি অংশ।
প্রথম অংশ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ( লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ )
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই। অর্থাৎ পৃথিবীতে ইলাহ বা ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ব্যতীত আর কেউ উপাস্য হতে পারে না। চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বাঘ-সিংহ, রাজা-বাদশাহ কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। বরং এসবের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাই হলেন একমাত্র মাবুদ। তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত বা উপাসনা করা যাবে না। এমনকি তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করাও যাবে না। আরবি 'লা-ইলাহা' শব্দের অর্থ কোনো ইলাহ নেই; আর 'ইল্লাল্লাহ' অর্থ আল্লাহ ছাড়া। কালিমার এ অংশটি না-বোধক শব্দ দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনো পাত্রে ভালো কিছু নেওয়ার আগে প্রথমে ঐ পাত্রটি খালি করে ফেলি। যেন ঐ জিনিসটি অন্য কিছুর সাথে মিশ্রিত না হয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। যেমন: একটি গ্লাসে পানি রয়েছে। তুমি যদি ঐ গ্লাসে দুধ নিতে চাও তাহলে কী করবে? প্রথমে গ্লাসের পানিটুকু ফেলে দেবে। তাই না? এরপর খালি গ্লাসে দুধ নেবে। গ্লাসে পানি রেখে দিয়ে তাতে দুধ নিলে দুধ আর পানি মিশ্রিত হয়ে যাবে। ফলে দুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। তদ্রূপ তাওহিদে বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন পবিত্র অন্তর। অর্থাৎ প্রথমে অন্তর থেকে সবরকমের ভুল ও ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করতে হবে। 'লা-ইলাহা' দ্বারা এটাই করা হয়। অতঃপর 'ইল্লাল্লাহু' দ্বারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হবে।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন মক্কা নগরীতে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন আরবের লোকেরা ছিল মূর্তিপূজক। তারা নানারূপ মূর্তি, গাছপালা, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদির পূজা করত। এজন্য রাসুল (স.) এ কালিমার দাওয়াত দেন। ফলে আরবের লোকজন মূর্তিপূজা থেকে অন্তরকে পরিষ্কার করে আল্লাহ পাকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।
দ্বিতীয় অংশ : مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)
অর্থ: মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল। অর্থাৎ মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি ও রাসুল। এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন ইমানের অংশ। কালিমা তায়্যিবার প্রথম অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যেমন জরুরি, দ্বিতীয় অংশের প্রতি ইমান আনাও তেমনই আবশ্যক। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের পাশাপাশি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কেননা তাঁর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ পাকের পরিচয় লাভ করি। তিনিই আমাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। ভালোমন্দ, সত্য, মিথ্যা ইত্যাদি তিনিই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এসব তিনি নিজ থেকে শিক্ষা দেননি। বরং মহান আল্লাহর নির্দেশেই শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করব যে, হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। তিনি নবি ও রাসুল। তিনি যে বাণী নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যাতে রয়েছে মানুষের জীবন পরিচালনার যথার্থ বিধিবিধান।
কালিমা তায়্যিবা ইমানের মূলভিত্তি। অতএব, আমরা শুদ্ধভাবে এ কালিমা পড়ব। এর অর্থ বুঝে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করব এবং এর মর্মানুসারে জীবনের সকল কাজ পরিচালনা করব।
| কাজ ঃ শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে বাড়ি থেকে বড় একটি কাগজে 'কালিমা তায়ি্যবা' অর্থসহ লিখে একটি পোস্টার তৈরি করে নিয়ে আসবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। | 
Read more